কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে বহুখাতভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে জয়েন্ট সুপারভিশন ভিজিটের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কার্যালয়ের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এ পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়।
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ‘অ্যাডপটিং এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ ফর নিউট্রিশন (আমান)’ প্রকল্পের সহায়তায় কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় এর আয়োজন করে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার খুরুশকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম পরিদর্শন করা হয়। এখানে কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মান উন্নয়নের জন্য সাপ্তাহিক আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন কর্মকর্তারা।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ত্রয়ী মণি দে বলেন, ‘আমি আমার জীবনে আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট এর উপকারিতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমাদের আগে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হতো না কিন্তু এখন দেওয়া হয়। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার আগে আমি অল্প পরিশ্রমে বেশি ক্লান্ত হয়ে যেতাম কিন্তু এখন পরিশ্রম করলেও অতটা ক্লান্তবোধ করি না। আগে ক্লাস করার সময় ঝিমানো ভাব ছিল এখন হয় না তা আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছি। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরে আমার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিবর্তন ঘটেছে। পাশাপাশি আমরা এখন পুষ্টি বিষয়ক অনেক কিছু জানতে পেরেছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিদ্যালয়ে ৬১২ জন মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রতি সপ্তাহে ১ জন করে ১টি আয়রন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট দেয়া হয়। এতে করে তাদের অনেক পরিবর্তনের পাশাপাশি পুষ্টির উপর সম্মুখ ধারণা লাভ করেছে।’
পরে ঈদগাঁও জাগিরপাড়ায় দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারিদের সঙ্গে একটি উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা খামারিদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন এবং তাদের সফলতার গল্প ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো শোনেন।
পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমার ১২টি গরু আছে। প্রতিটি গরু দৈনিক ৩ লিটার দুধ দেয়। সব মিলে দৈনিক ৩৫-৩৬ লিটার উৎপাদন করতে পারি। এতে করে আমার পরিবার স্বচ্ছল। লাভের টাকায় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠাতে পেরেছি। গরু গুলোকে কাঁচা ও শুকনো ঘাস, ভূসি, ভাতের ফেনা ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। গরুগুলো লালন পালনে সহযোগিতা করে আসছে আমান প্রকল্প। জাগিরপাড়ায় আমরা ৩১ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ মিলে ডেইরি লালন-পালন ও দুগ্ধ খামারী রয়েছি।’
এই যৌথ পরিদর্শনের মাধ্যমে কক্সবাজারের পুষ্টি কার্যক্রম আরও সুসংহত ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছেন তারা।
ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পুষ্টি উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে। খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই পুষ্টিকর খাবার বেছে নিতে পারেন না। এজন্য জনগণের মধ্যে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কৃষি উৎপাদনে পুষ্টিকর খাদ্যশস্য, সবজি, ফল এবং খামার ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে, যাতে সবাই এসব জিনিস থেকে সহজেই পুষ্টিকর খাবার পেতে পারেন। এছাড়াও আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান যোগ করতে হবে, যাতে সবাই সকল ধরনের পুষ্টি পেতে পারে।
নিউট্রেশন ইন্টারন্যাশনালের প্রজেক্ট অফিসার অমিত কুমার মালাকারের সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানে জয়েন্ট সুপারভিশন ভিজিটে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. অং সুই প্রূ মারমা, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো তাহেরুল ইসলাম খান, উপ-পরিচালক ডা. মো. আক্তার ইমাম, ডা. নুসরাত জাহান, ডা. নুসরাত জাহান মিথেন, কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ে পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।