আশিকুর রহমান :-
নরসিংদী শহরের ভাঙাচুরা রাস্তা ও দীর্ঘদিনের পরে থাকা ময়লার ভাগাড়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন বলে অভিযোগ করেন নরসিংদী পৌরবাসী। পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেও দায়ী করেন তাঁরা। জেলার প্রথম শ্রেণী মর্যাদা সম্পূর্ণ নরসিংদী পৌরসভা। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা। পৌরসভাটি ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয়। আয়তন প্রায় ১০.৩২ কি.মি.। ১৯৯৬ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে। মোট লোকসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কি.মি দূরত্ব হওয়া সত্ত্বেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক রাস্তা ও ময়লার ভাগাড়ে পড়ে আছে বেহাল হয়ে। পৌর কতৃপক্ষের রয়েছে উদাসিনতা। পৌরসভার মেইন গেইট থেকে পুরাতন থানার ঘাট, বড়বাজার, সূতাপট্টির মোড় হয়ে বাজির মোড়, পায়রা চত্বর হতে নতুন লঞ্চঘাটের রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। ফলে এসব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে আসা মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে চলাচলের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এসব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বেহাল অবস্থার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তাগুলো ভেঙেচুরমার হয়ে গেছে। রিকশা চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। রীতিমতো ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, কেউ পা পিছলে পড়ে হাত-পা ভাঙছে। ভাঙা রাস্তায় রিকশা-অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে চালকরা। এসব রাস্তা মেরামতে নিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্হা। রাস্তার কষ্টের লাঘব দূর না হতেই শহরবাসীর আরেক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়লা-আবর্জনা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন এবং ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় প্রায় পৌর শহরই এখন পরিণত হয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে। শহরের বিভিন্ন স্হান থেকে ময়লা আবর্জনা জড়ো করে ফেলা হচ্ছে সদর রোড়ের আবাসিক এলাকা সেবাসংঘ, ব্রাহ্মন্দী এলাকার শিক্ষা চত্বর, উপজেলা মোড় এবং বড়বাজার সংলগ্ন হাড়িধোয়া নদীতে। এছাড়াও শহরের বেশ কয়েকটি উন্মুক্ত স্থানে, রাস্তার পাশে এবং অলিগলিতে। ফলে এলাকাবাসীর ফেলা ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নরসিংদী শহরের পরিবেশ। শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ছোট-বড় ময়লার ভাগাড়। সেখানে বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের সঙ্গে গরু-ছাগল, কুকুর ও বিড়াল দিনরাত বিষবাষ্প তৈরি করছে। এসব থেকে বিস্তার ঘটছে মারাত্মক রোগব্যাধি। দূষিত হয়ে পড়ছে নগরের সার্বিক পরিবেশ। রাস্তার অলিগলিতে পড়ে থাকা ময়লা স্তুপগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এতে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এসব আবর্জনা স্তূপ গড়ে উঠছে বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায়। সেবাসংঘ, মধ্য কান্দাপাড়া, পশ্চিম কান্দাপাড়া, বড়বাজার সংলগ্ন হাড়িধোয়া নদী, বৌয়াপুর বেড়িবাঁধ, শিক্ষা চত্বর, ভেলানগর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ময়লার পাহাড় জমে আছে দীর্ঘদিন ধরেই। এলাকাবাসী অপসারণের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।
এলাকাবাসী ও পথচারীরা জানান, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও আজ অবধি পর্যন্ত আমরা পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রতিটা ওয়ার্ডের রাস্তা-ঘাট ভাঙাচুরা। রিকশা-অটো নিয়ে চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাই এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আরও বলেন, এক তো হলো রাস্তা, তারপর আবার মরার ওপর খাঁড়ার গাঁ। দেখুন কতটা নোংরা পরিবেশে আমরা এলাকায় বসবাস করছি। বেশ কয়েকদিন ধরে রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে ময়লার স্তুপ। এগুলো পৌরসভার থেকে নেওয়ার নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই। ময়লার দুর্গন্ধে পরিবার নিয়ে বসবাস করাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। এখানে কোনো ডাস্টবিনও নেই। ময়লা নেয়ার গাড়িও আসে না। ফলে এলাকাবাসীর ফেলা ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব ময়লা-আবর্জনার কারণে বিভিন্ন প্রকারের রোগে-শোকে ভুগছি আমরা। এলাকার এসব সমস্যার বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কোন উদ্যোগ নেই। তারা এগুলোর তদারকি করে না। বিশেষ করে তাদেরকে বেশির ভাগ সময় এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে আমরা সাধারণ পথচারীরা নাকে রুমাল চেপে রাস্তায় চলাচল করতে হয় সেটা বলাই বাহুল্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অনিল ঘোষ বলেন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করবো। সবার আগে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়ির সব ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে বার বার বলার পরও তারা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে না। এছাড়া নিয়মিতভাবেই ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করার কথাও জানান তিনি।