ঢাকাসোমবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

কালীগঞ্জ মাদ্রাসা কেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার কক্ষে বিশেষ সুবিধা প্রধানের অভিযোগ

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ ২:০৬ অপরাহ্ণ । ৩১ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কালীগঞ্জে পরীক্ষার কেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাইলদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আতিক মোল্ল্যা নামের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মো. আতিক মোল্ল্যা বলেন, স্বাক্ষী প্রমান কিছু নেই, রিপোর্ট কইরা কি হইবো? দেখা কইরেন কিছু দিয়া দিমুনে। লেখালেখি কইরা কিচ্ছু অইতনা। তার থেকে ভালো কিছু নেন আর চুপ থাকেন।
গত বৃহষ্পতিবার (২২ ফেব্রæয়ারী) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার চতুর্থ দিন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে গণিত পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই কেন্দ্রের হল সুপার মো. মোতাহার হোসেন।
জানা গেছে, দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ১ জন শিক্ষক পরীক্ষার কক্ষে পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিবেন বলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। পরে পরীক্ষার্থীরা সেই টাকা পরিশোধ করলে ওই শিক্ষক তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নকল সাপ্লাই করেন। যারা নকল পায়নি তারা এ নিয়ে কেন্দ্রে হট্টোগল বাধালে বিষয়টি কেন্দ্রে জানাজানি হয়ে যায়। পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করলে কেন্দ্রের সহকারী হল সুপার মো. নজরুল ইসলামের মধ্যস্ততায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের টাকা ফিরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিশ^স্ত সূত্র থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আতিক মোল্ল্যা সুদের ব্যাবসা পরিচালনা করেন। কয়েক বছর আগে একজনকে সুদে টাকা দিলে তা ফেরৎ নেওয়ার জন্য নিজে আতœগোপনে গিয়ে ওই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে থানায় গুমের মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশের তদন্তে তিনি নিজেই বেরিয়ে আসেন। এছাড়াও তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে পুলিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে ভোট কারচুপির মামলায় সাজাও খেটেছেন, পাশাপাশি জাল ওয়ারিশও সনদ তৈরী করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র সহকারী হল সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এই ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না। আপনার যা কিছু বলার বা জানার কেন্দ্রের প্রধান সুপারের সাথে কথা বলেন।
কেন্দ্র সুপার মো. মোতাহার হোসেন বলেন, আমি অন্য একটি রুমে পরীক্ষার জন্য কাজে ব্যাস্ত ছিলাম। পরীক্ষা শেষে আমি বিষয়টি জানতে পারি। পরে সময় কম বিধায় ঐদিন আর কিছু বলিনি, তবে বিষয়টি কেন্দ্র সচিবকে জানিয়েছি। আজকে ঐ রুমের কয়েকজন ছাত্রকে ডেকে এনে তাদের আর্থিক লেনদেনের কথা জিজ্ঞেস করি। তাদের মধ্যে একজন ছাত্র ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। আমি ছাত্রদের পরামর্শ দিয়েছি তারা যেন লিখিত অভিযোগ করে। আমরা ঐ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। আপাতত তাকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অপর পরীক্ষক মো. মহসীন বলেন, আমি আতিক স্যারের সাথে একরুমে পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিলাম। আমি আমার নিজ দায়িত্ব পালনে মনযোগী ছিলাম। পরীক্ষা শেষে কিছু ছাত্র এসে আতিক স্যারকে ধরলে পরিস্থিতি ভিন্নরুপ ধারণ করে। পরে দেখলাম তিনি পকেট থেকে বের করে ছাত্রদের টাকা দিচ্ছেন। এর বাইরে কিছু জানিনা।
কেন্দ্র সচিব ও দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল আমিন আজাদী ঘটনার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার কেন্দ্রে এমন কিছুই হয়নি। পরীক্ষা ভালো হচ্ছে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আতিক মোল্ল্যা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে বলেন, প্রত্যেকটা কেন্দ্রেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। এগুলা ধরে পারা যাবেনা। পরে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির কথা জানালে তিনি সাংবাদিক কে  অর্থের প্রলোভন দেখান এবং বলেন, এইসব লিখে কিছুই হবে না। আমার সাথে দেখা করেন কিছু নিয়ে যান এবং চুপ থাকেন। এগুলো সবসময়ই হয়ে থাকে। এটা কোন বিষয় না।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র তত্বাবধায়ক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, এই বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। আমি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের জেরে ৬ জন শিক্ষককে বরখাস্তও করেছি। আমি জানতে পারলে ঐ দিনই এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নিতাম।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার থেকে লুকানো হয়েছে, ঘটনাটি আমি জানতাম না। আমি জেনে দ্রুত আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।