আশিকুর রহমান :-
নরসিংদী শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান গুলোতে ডিজে সাউন্ড বক্সের মাত্রাতিরিক্ত শব্দে শব্দদূষণ হচ্ছে। ফলে নগর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এসব শব্দ দূষণে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন থাকলেও তা অদৃশ্য কারণে প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে শব্দ দূষণ রোধ। প্রতিদিন শহরের কোনো না কোনো কমিউনিটি সেন্টারে ডিজে সাউন্ড বক্স, পটকাবাজি, ডিজেল চালিত জেনারেটরের কারণে শব্দ দূষণ দিন দিন বাড়ছেই। এসব কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে বিয়ে সহ নানা অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে বাজে ডিজে সাউন্ড সিস্টেমের বক্স। অপরদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে পূজা মন্ডপ গুলোতে সারারাত ধরে চলে গান বাজনা ও হৈ হুল্লোড়। এসব উচ্চ শব্দের গান বাজনার মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। চরম ভূগোন্তিতে পড়তে হচ্ছে শিশু সহ অসুস্থ রোগীরা। শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের বিধান থাকলেও তা অদৃশ্য কারণে প্রয়োগ হচ্ছে না। শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমনা পরীক্ষা। আর সামনে রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এতে করে পরীক্ষার্থীদেরও নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় চরম সমস্যা হচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। ২০০৬ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইনের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়।
এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। শুধু নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসিক এলাকায় শব্দের মান মাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রের ব্যবহার করা গেলেও শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও পাড়া-মহল্লায় সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে নিত্যদিন অবাধে চলছে শব্দ দূষণকারী যন্ত্রের ব্যবহার।
এবিষয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, এসব সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সারারাত গান বাজনা চলে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, সরস্বতী পূজা হয় একদিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তিনদিন ধরে সারারাত ধরে গান বাজনা চলছে। আমি একজন ভুক্তভোগী হয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, স্বাধীন দেশ। যার যা খুশি তাই করে। মানুষের চিন্তা কেউ করে না। এভাবে উচ্চশব্দে মাইকে গান বাজিয়ে উৎসব হয় না, রীতিমত মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে। ইদানীং শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দদূষণ বেড়েছে। যত্রতত্র মাইক বাজানো, পটকাবাজির আওয়াজ, ডিজেল চালিত জেনারেটর, ডিজে সাউন্ড সিস্টেম বক্সের মাধ্যমে উচ্চশব্দে গান বাজানো হচ্ছে। তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে স্থানীয় জনসাধারণ সাময়িক বধির বা স্থায়ী বধির হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং শিশু-কিশোররা রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। এছাড়াও পরীক্ষার্থীরা বেশি ভুগছেন বলে জানান তারা। তারা আরও বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা রোধ করার যেহেতু আইন আছে, ওইসব দুই-এক জায়গায় আইন প্রয়োগ করে জেল-জরিমানা করলে শব্দ দূষণ অনেকটা হ্রাস পাবে বলে মনে হয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে কোন উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, অ্যামপ্লিফায়ার বা কোন যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না বলে জানান।
এবিষয়ে শহর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা বলেন, শুধু সরস্বতী পূজা না। যেকোনো পূজা অনুষ্ঠানে গান বাজনা বাজানোর নিদিষ্ট নিয়ম আছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আমরা ততটুকু প্রয়োগ করতে পারি। আর বাকিটা করবে স্থানীয় প্রশাসন।