আশিকুর রহমান: নরসিংদীতে একদিনে এক কিশোরীকে ধর্ষণ, অন্যদিকে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে খুন এবং ছেলের হাতে বাবা খুন সহ পৃথক ৩টি ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছেন। এসব পৃথক ঘটনায় অপরাধ চক্রের ৪ জনকে আটক করেছেন স্ব স্ব থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) বিকেলে নরসিংদী সদর থানা ও মাধবদী থানার ওসি এবং শেখেরচর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ধর্ষণ মামলায় আটকৃতরা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর কান্দা পাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে  নাদিম মাহমুদ দিপু (১৯), একই গ্রামের মুসলিম মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া ওরফে রাশেদ মিয়া (২১) ও মিলন সরকারের ছেলে মেহেদী হাসান শিবলী (২১) এবং খুনের ঘটনায় নিহত আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫)।
নরসিংদী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারী (রবিবার) দুপুরে সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর গেইট বাজারের পাশে অবস্থিত সরোয়ার হোসেনের বাড়িতে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে একই এলাকার রাসেল, দিপু ও শিবলী নামে ৩ জন বখাটে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে  ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে বিষয়টি ভুক্তভোগী তার পরিবারকে জানালে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার পর পরই সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দ্রুত  ঘটনাস্হলে পৌঁছে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জনকে আটক করেন।ভুক্তভোগীর মা রাবেয়া বেগম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত রাসেল মিয়া ওরফে রাশেদ মিয়া আমার মেয়েকে বিবাহ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো। কিন্তু আমার মেয়ে এ প্রস্তাব  প্রত্যাখান করে। গত রবিবার আমার মেয়ে ভোটার আইডি কার্ড বানানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা রাশেদ, দিপু ও শিবলী বাদুয়ারচরের একটি বাড়িতে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। তারা পশু। তারা আমার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ঘটনার পরপরই আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসি। তিনি আরও বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করে পুলিশী প্রহরায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপর আরেক ঘটনায় শেখেরচরে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতর মা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার শেখেরচর (বাবুরহাট) বাজারের এবতেদাদিয়া মাদ্রাসার পূর্ব পাশে মোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন শেখেরচর পুলিশ ফাঁড়ীর পরিদর্শক মোঃ মাসুদ আলম। এতে মোফাজ্জলের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে সুমনা আক্তার তিথি (১৩) নিহত এবং তার স্ত্রী আসমা আক্তার (৪০) গুরুত্বর আহত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলায় শেখেরচর (বাবুরহাট) এলাকায় তিথী আক্তার, তার চার বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ভাই ও মা আছমা আক্তার ঘরে ছিল। রাত ১১টার দিকে তিথীর বাবা মোফাজ্জল হোসেন নিজের পান-সিগারেটের দোকান থেকে বাসায় এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের দুজনকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মোফাজ্জল আহত মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তিথীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মোফাজ্জলের স্ত্রী আছমা বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসময় তার এক প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে অক্ষত অবস্থায় বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়।
মোফাজ্জল হোসেন জানান, ছোট বাড়িটির নীচতলায় কাপড়ের দোকানের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেওয়া। দ্বিতীয় তলায় তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। নিহত মেয়ে তিথি স্থানীয় মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। কে বা কারা কী কারণে তার স্ত্রী-সন্তানকে ঘরে ঢুকে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে বুঝতে পারছিনা।
শেখেরচর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোঃ মাসুদ আলম বলেন, নিহত তিথীর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর  হামলা করে পালিয়ে গেছে। তবে কি কারণে এ হামলা এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করবো। খবর পেয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কারুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অন্যদিকে পারিবারিক কলহের জের ধরে মাধবদীতে ছেলের হাতে বাবা খুন হয়েছে বলে জানা যায়। নিহত ব্যক্তি হলেন, আব্দুল গফুর (৮৫)। তিনি মাধবদী থানাধীন ছোট গদাইরচর গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) সকালে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই গফুর মিয়ার এক ছেলে ও তিন মেয়েদের মধ্যে দোকান ভাড়ার টাকা এবং জমি ভাগাভাগী নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। মঙ্গলবার যথারীতি ভাড়াটিয়াদের সাথে লেনদেন নিয়ে ভাইবোনদের সিদ্ধান্তের দিন নির্ধারিত ছিলো। এদিনই সকালে তারা তাদের বাড়িতে গফুর মিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নিহতের মেয়ে আয়েশা ও আছমা অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই আবদুর রহমান সম্পত্তি ও টাকার জন্য আমার বাবাকে হত্যা করে। দীর্ঘ দিন ধরেই একটি দোকানের ভাড়া নিয়ে আমার বাবার সাথে ভাইয়ে ঝামেলা চলে আসছে।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক বিরোধ এবং অর্থসংক্রান্ত দ্বন্দ্বকে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ছেলে আব্দুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেসাবাদ চলছে। সেই সাথে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।