ঢাকাবুধবার , ২২ জানুয়ারি ২০২৫
Tanim Cargo
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ধনবাড়ীতে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলা’র ঐতিহ্য ঢেঁকি

আজকের বিনোদন
জানুয়ারি ২২, ২০২৫ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ । ৭ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

“বৌ ধান বানরে উঠানে বসিয়া, আমি নাছি তুমি নাচ হেলিয়া ধুালয়া বৌ ধান বানরে”। নেচে গেয়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’ দিয়ে চালগুড়া করার প্রাচিন এই পদ্ধত্বি বিলুপ্ত প্রায়।
গ্রাম বাংলা ঐতিহ্য ঢেঁকি, আজ হারিয়ে যেতে বসেছে । অতীতে গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে ছিলো কাঠের তৈরি এ ঢেঁকি। আজ সারা গ্রাম খুঁজলে ১/২ ঢেঁকি পাওয়া যায় ।
৭০ বছর বয়সী জমেলা বিবি বলেন, আমাদের সময় অনেক মহিলা ছিলো যারা এ বাড়ি ও বাড়ি ঢেঁকি দিয়ে ধান ভেনে ( চাউল তৈরী করে) সংসার চালাত, আজ সে সব মহিলারা বেকার। ঢেঁকিতে তৈরি চাল দিয়ে ভাত রান্না বা চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করে খাওয়ার মজাটাই আলাদা। কয়েক বছর আগেও ঢেঁকির ধুমধাম শব্দ শুনলে মানুষে বুঝতে পারতো, ঐ বাড়িতে নতুন কুটুম বা জামাই  এসেছে।
অতিথীদের জন্য তৈরি করা হতো রসের পায়েস, দুধের  পিঠা, রসের পিঠা, পুলি পিঠা, দুধ খেজুর পিঠা, চিতল পিঠা, মেরা পিঠা,তেলের  পিঠা,চিকন পিঠ, সহ বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরী করা হত। বিশেষ করে শীত কাল বা পৌষ মাসে জামাই, মেয়ে, ভাগ্নে ভাগ্নি এমনকি বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন শহর থেকে ছুটতো গ্রামে পিঠা খাওয়ার জন্য। বাড়িতে বাড়িতে বসতো পিঠা তৈরির উৎসব। এ সকল উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে, তার কারণ ঢেঁকি।
পাইস্কা হরি না তেলি গ্রামের ৬৫ বয়সে ফজর আলী বলেন, ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত  ধনবাড়ী উপজেলা। কয়েক বছর আগে জামাই বা নতুন আত্মীয় স্বজন আসলে পায়েস বা পিঠা তৈরির ধুম পড়ত গ্রামের বাড়িতে। এমন কি ঢেঁকির শব্দ শুনলে আমরা বুঝতে পারতাম ঐ বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এসেছে। কিন্তু আজ এ সকল ধুমধাম শব্দ বা পিঠা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলা থেকে এ ঢেঁকির কারণে।
জামালেরমা, আয়েশা ও জাহেদা বেগম বলেন, আমরা দুজনে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরি করতাম। এক মন ধান ঢেঁকির মাধ্যমে মাড়াই করলে আমাদের দু’জনকে ২ কেজি চাল দিত তবে বর্তমান সময়ের চাল আর আগের দিনের ঢেঁকির তৈরি চাল আকাশ পাতাল ব্যবধান। ঢেঁকির স্থান দখল করে নিয়েছে রাইস মেইল গুলো।
মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি পশ্চিম বারা খালপাড়া গ্রামের, জলিল  বলেন, আগে পৌষ মাসে আমাদের এলাকায় পিঠা তৈরির হিড়িক পড়তো আজ তা চোখে পড়ে না। আমাদের মা চাচীরা এক সঙ্গে ১০/১২ মন ধান এক সঙ্গে ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরি করত। যারা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরি করে দিতো তাদের দিতে হতো মন প্রতি ২ কেজি চাল। সময়ের প্রবাহে আমাদের সেই ঐতিহ্যবাহী ‘ঢেঁকি যেন  আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
ধনবাড়ী উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিলন বলেন,
টাংগাইলে ধনবাড়ী  উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের ধান চাল ভাঙ্গার একমাত্র অবলম্বন ঢেঁকি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না।

Tanim Cargo
Tanim Cargo