মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল পড়ুয়া তরুনীকে উতক্ত করার অপরাধে গ্রাম্য শালীসের পূর্ব দিন বাড়ী থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় অপহরন করতে এসে পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধে গুরুত্বর আহত হয়েছে বখাটে আতাউর রহমান (২৭)। আহত বখাটে আতাউর এখন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে কমলগঞ্জ থানার পুলিশ তরুনীর পিতা হুমায়ুনকে ফোনে ডেকে এনে বখাটেকে আহত করার অপরাধে আটক করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ জানুয়ারী সকাল ১০টায়।
উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল ছাত্রীর বাবা হুমায়ুন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে রিয়া আক্তার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। একই গ্রামের হুমায়ুনের ভাই হারুন মিয়ার ছেলে রাজ মিন্ত্রিরী আতাউর রহমান (৩০) পূর্বে ২টি বিয়ে করেছে এবং তাদেরকে নির্যাতন করে তালাক দিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে তার মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্তক্ত করে। মেয়েটি বিবাহিত চাচাতো ভাইয়ের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে। মেয়েকে উতক্ত করার বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় লিখিত ভাবে অবহিত করে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে ২০ জানুয়ারী সকালে এরাকায় শালীস বৈঠক বসার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে বখাটে আতাউর ১৯ জানুয়ারী ভোরে মোটর সাইকেল যোগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার অপর সঙ্গিকে সাথে নিয়ে তরুনীকে অপহরন করতে যায় হুমায়ুনের বাড়ীতে যায়। এসময় হুমায়ুন ও তার পরিবারের লোকজন আতাউর ও তার সঙ্গীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করে। তাদের প্রতিরোধে আতাউরের মোটর সাইকেল ভাংচুর করে ও আতাউরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। হামলায় আতাউর গুরুত্ব আহত হলে তার আত্নীয়-সজ¦নরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্কুল ছাত্রী রিয়ার মা বলেন, ‘ঘটনার রাতে তার স্বামী মুন্সিবাজার অবস্থান করার সময় কমলগঞ্জ থানা থেকে তাকে ফোন করে বিষয়টি সর্ম্পকে জানার জন্য ডেকে নিয়ে আতাউরের উপর হামলার কারনে আটক করে পরদিন মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
অপরদিকে সোমবার দুপুরে একদল সাংবাদিক সরজমিনে পরিদর্শন করতে গেলে এলাকার দিলারা বেগম, নানু মিয়া, লতিফ মিয়া ও লাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আতাউর পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রী। আগে আওয়ামী লীগে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির লাঠিয়াল হিসাবে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তার ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলতে পারেনা।
তারা আরো বলেন, ‘সে আগে বৃন্দাবনপুর ও রামেশ্বরপুর গ্রামে ২টি বিয়ে করেছিল। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এছাড়া তার অত্যাচারে মইনউদ্দিনের পরিবারে বাড়ী-ঘর ফেলে রেখে বর্তমানে গিয়াসনগর এলাকায় বসবাস করছে।
তারা বলেন, গত বছর শালীস চলাকালীন সময় তার বিরুদ্ধে কথা বলায় শালীসান ফটিক মিয়াকে বৈঠক স্থলেই চাকু দিয়ে আঘাত করে আহত করে। বর্তমানে সে বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে চলে গেছে। তাদের প্রশ্রয় আবারো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। হুমায়ুনের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে যাওয়া- আসার সময় বিরক্ত করার অভিযোগে ২০ জানুয়ারী এলাকায় শালীস বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তুু তার আগেই সন্ত্রাসী নিয়ে তার মেয়েকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে হুমায়ুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত করেছে।
এদিকে আতাউরের সাথে এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার মোটোফোনে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াতির মিয়া বলেন, আতাউর খুব খারাপ লোক। এলাকায় যত অন্যায় অপকর্ম আছে সবগুলোর সাথে সে জড়িত। তার নেতৃত্বে সব ধরনের কাজ এ এলাকায় হয়। আমরা বিচারি হয়েও তার বিচার করতে পারিনা। সে আগে যুবলীগ করতো এখন বিএনপি করে। আমরা চাই পুলিশের বিষয়টি গুরুর্ত্ব সহকারে দেখার জন্য। তবে তিনি বলেন, আইন হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি হুমায়ুনের। তারা আতাউরকে মারা ঠিক হয়নি।
কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শামীম আকনজি বলেন, ‘মেয়ের পরিবার থেকে একটি অভিযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দেখে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে আতাউর রহমানকে তারা রাস্তায় আটক করে গুরুত্বর আহত করে হুমায়ুন। বরিবার আতাউরের পরিবার এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ হুমায়ুনকে আটক করে সোমবার জেল হাজতে পাঠায়।