ঢাকামঙ্গলবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

মেঘনা নদীর পানি যেন আলকাতরা

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ । ১৪৯ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আশিকুর রহমান :-

নরসিংদীর বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্যামিকেল মিশ্রিত পানির ফলে ভয়াবহ দূষণের শিকার নরসিংদী সদর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীর পানি। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বসবাস ছিল। নদীর পানি ব্যবহার হতো কৃষিকাজে। বর্তমানে কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য ও ক্যামিকেলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দূষণ। নদীর স্বচ্ছ পানি এখন আলকাতরার মতো কালো রং ধারণ করেছে। একসময় মানুষ নদীর পাড়ে বসে আড্ডা দিত। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। দূষণের কারণে এলাকায় কৃষিকাজে এই পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে পানির অভাবে অনেক জমি কৃষি কাজে ব্যাহত হচ্ছে। এই নদীতে একসময় বড় বড় জাহাজ আর পাল তোলা নৌকা চলতো। নদী পথে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে সহজেই ছুটে আসতেন নরসিংদীতে। ফলে নদীর তীরে গড়ে তুলেন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে করে দিনদিন নদী সংকুচিত হতে থাকে। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময়ই নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌকাও চলে না। তাছাড়া কারখানার বর্জ্য মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মাত্রা কম থাকে। এ কারণে এই নদীতে মাছ বাঁচে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলাটি আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া ও মেঘনা নদী ধারা বেষ্টিত। আড়িয়াল খাঁ ও হাড়িধোয়ার পানি মেঘনা নদীর উপর প্রবাহিত হচ্ছে। নরসিংদী সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা শিবপুরের বড়ইতলা এলাকায় গড়ে ওঠা কয়েকটি শিল্প কারখানা, শিল্পনগরী বিসিক, সদর উপজেলার ঘোড়াদিয়া ব্রিজ, হাজীপুর ব্রিজের নিচ দিয়ে বেশ কয়েকটি কলকারখানার বর্জ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি আড়িয়াল খাঁ ও হাড়িধোয়া নদীতে পড়ছে। এই নদীর পানি পরে মেঘনা নদে এসে মিলিত হয়। এছাড়া মেঘনা নদীতে সারাসরি শহরের বিভিন্ন শিল্প কারখানা, শিলামান্দী, মহিষেরশুড়া, কাঁঠালিয়া ও মাধবদী এলাকায় গড়ে ওঠা অসংখ্য ড্রাইং এন্ড ফিনিশিংয়ের ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি ও বর্জ্য খালের মাধ্যমে সরাসরি ফেলা হচ্ছে মেঘনা নদীতে। হাজীপুর এলাকার জেলে মজনু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে এ নদীতে জাল বেয়ে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা হতো। একসময় এ নদী দিয়ে সিলেটের হাওড় অঞ্চল থেকে গয়না নামক নৌকা দিয়ে মালামাল নিয়ে আসতো নরসিংদীর বড় বাজারে। এ কখন মাছতো দূরের কথা রংয়ের পানিতে নদীই শুকিয়ে গেছে। ফলে এটা মরা নদী হিসেবে পরিচিত। জেলের কাজ বাদ দিয়ে এখন দিনমুজুরের কাজ করি। বাদুয়ারচরের কৃষক ইসলাম মিয়া বলেন, একসময় এ অঞ্চলে অনেক শস্য চাষ করা হতো। কিন্তু নদীর পানি দূষণ ও পানির অভাবে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
নজরপুর ও করিমপুর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক ও জেলেরা জানান, মেঘনা নদীর দুপাড়ে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমি চাষাবাদের জন্য উপযোগী ছিলো। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় জমি উর্বর ছিলো। দিন দিন শিল্প কারখানার ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি ও বজ্য নদীতে ফেলার কারণে পানি দূষিত হয়ে গেছে। এই পানি এখন আলকাতরার মত হয়ে গেছে। আগে আমরা নদীর পানি দিয়ে রান্না করা থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় কাজ করতাম। এ নদীতে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। এখন দূষণের কারণে আগের মতো আর মাছ নেই। মিল কারখানান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বর্জ্য ও ক্যামিকেলের পানি ফেলে দূষিত করছেন নদী। আরও বলেন, নদীর উত্তাল ঢেউ আর স্রোত এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে নদীটি দূষণের ফলে সব ঐতিহ্য হারিয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য ও ক্যামিকেলের পানি প্রতিদিনই নদীতে নামছে। পানির দূর্গন্ধে টিকে থাকা যাচ্ছে না।
পরিবেশ আন্দোলনের একাধিক নেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। তা আজ দৃশ্যমান। সরকার ঘোষিত প্রত্যেক শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হলেও তা মানছে না মালিকরা। আর না মানার কারণেই হাড়িধোয়া, আড়িয়ল খাঁ ও মেঘনা নদী এখন মৃত্যু প্রায়। আমরা বেশ কয়েকবার দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য নদী রক্ষা আন্দোলন করেছি। তারপরও দূষণমুক্ত রাখতে পারিনি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী’র সহকারী পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায় প্রতিনিধিকে জানান, গত কয়েকদিন আগে আমরা জেলা প্রশাসকের সহায়তায় হাঁড়িধোয়া নদীর দু’পাশ দখলদার হাত থেকে দখল মুক্ত করেছি। নদীর পানি দূষণ রোধে শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে এখনও ইটিপি স্থাপন করা হয়নি তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। ইটিপি থাকা সত্ত্বেও চালু না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম হওয়ার সুযোগ নেই। যারা এমন কাজ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক ইটিপিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা করলেই ইটিপি বন্ধ রাখতে পারবেনা। প্রতিনিয়ত অভিযানের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে তা দিতে পারছি না।