ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য

সংঘাতে পালিয়ে আসা মায়ানমার সৈন্যসহ ৩৩০ জন স্বদেশের ফেরত

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ ১২:৩১ অপরাহ্ণ । ৫২ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাহাঙ্গীর আলম শামস,কক্সবাজার :

মায়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মায়ানমারের সেনাসহ ৩৩০ জন স্বদেশের পথে যাত্রা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কক্সবাজারের ইনানীতে আসা মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির কর্নেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি এই ৩৩০ জনকে গ্রহণ করে মায়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ যোগে যাত্রা দেয়।
#যেভাবে হয়েছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া :
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মায়ানমারের সেনা সহ ৩৩০ জনকে মায়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিজিবির অধিনে।
বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২ ফেব্রæয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপি সহ  ৩৩০ জন। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের তরফে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়।
তিনি বলেন, এর প্রেক্ষিতে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মায়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে।
এর জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও টেকনাফ থেকে বিজিবির কড়া পাহারায় কক্সবাজারের ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাটে এই ৩৩০ জনকে আনা হয়। যেখানে সকাল ৮ টা থেকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মায়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কোস্টগার্ডের জাহাজ থেকে ইনানী জেটিতে আসেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির কর্ণেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি। যেখানে পৌঁছার পর উভয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে লিখিত কাগজে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা ১১ টার দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ের সামনেই ৩৩০ সদস্যকে বিজিপির কর্ণেল মিও থুরা নউংয়ের হাতে হস্তান্তর করেন। এরপর একে একে ১৬৫ জনকে জেটি দিয়ে তোলা হয় সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচলকারি পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলিতে। দুপুর ১২ টার দিকে জাহাজটি ১৬৫ জনকে নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমান্ত্রে অপেক্ষারত মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজে পৌঁছে দেয়। পরে ফিরে ৪ টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৬৫ জনকে নিয়ে পৌঁছানো হয় মিয়ানমারের জাহাজে। তার মিয়ানমারের জাহাজটি যাত্রা দেয় মিয়ানমারের রাজধানীর দিকে।
এসময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের এপারে এসে পড়ে। এতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ৩৩০ জনকে বিজিবির পক্ষে সর্বোচ্চ সহায়তা ও সহযোগিদা প্রদান করা হয়েছে। আহতদের দেয়া হয়েছে চিকিৎসা। উভয় দেশের আন্তরিকতায় এবং নানা মহলের সহ সহযোগিতায় এদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হল। এর জন্য তিনি সাংবাদিক সহ সকলকে ধন্যতা জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সীমান্তে সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে। রোহিঙ্গা সহ কোন প্রকার অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির প্রতি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক আর উন্নত হয়েছে।
এদিকে, সীমান্ত পরিস্থিতি বৃহস্পতিবারও পুরোদিনই শান্ত ছিল। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলা বারুদ বিস্ফোরণের কোন শব্দ দিনব্যাপী শুনেন নি সীমান্তবাসী।