ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Tanim Cargo
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জুলাই আগস্টের গণঅভুত্থ্যানে স্বৈরাচারী লেডি ফেরাউন জালিমশাহী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হয়েছে —–আল্লামা মামুনুল হক

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ ২:২৫ পূর্বাহ্ণ । ১২ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের গণঅভুত্থ্যানে বাংলাদেশের মানুষের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা স্বৈরাচারী লেডি ফেরাউন, জালিমশাহী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হয়েছে। এদেশের আজ মানুষ মুক্ত হয়েছেন। একটি নতুন বাংলাদেশ পেতে দীর্ঘ ১৫ বছর এদেশের অনেক মানুষকে শাহাদৎ বরণ, ত্যাগ স্বীকার ও বুকের তাজা রক্তদান করতে হয়েছে।
ছাত্র জনতার সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মেহেরপুর শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রারি) রাত আটটার দিকে মেহেরপুর শহীদ ডঃ সামসুদ্দোহা পার্কে আয়োজিত এই গণ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মুফতি হুসাইন আহমাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিগত ৫০ বছর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এদেশের মানুষকে বারবার একটি চেতনার কথা শুনিয়েছেন। আসলে সেই চেতনা ছিল ভারতীয় চেতনা। বাহাত্তরের চেতনা দিয়ে একাত্তরের চেতনা বলে জাতীকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষকে আধিপত্যবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদী বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, হিন্দুদ্ববাদী পশ্চিমবঙ্গের দাদাদের মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে, পশ্চিমপাকিস্থানী খান পাঠানদের প্রভূত্তের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। প্রতিটি আধিপত্যবাদী জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৪৭ সালে যেভাবে বৃটিশদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলাম ঠিক তেমনী পশ্চিমবঙ্গের দাদাদের আধিপত্য থেকেও এদেশের মুসলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, বাহাত্তরের চেতনা ছিল বাংলাদেশকে ভাগ করার চেতনা। বাহাত্তরের চেতনা ছিল বাংলাদেশে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার দাবীকে গলা টিপে হত্যা করার চেতনা। সেই চেতনার গান গাইতে গাইতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এদেশে ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষকে ১৯০ বছর যাবৎ স¤্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালে এদেশের মানুষ বৃটিশদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। বৃটিশ আমলে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের মানুষ সতন্ত্র জাতীসত্তা গঠণের লক্ষে এই অঞ্চলের মুসলমানদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে পশ্চিমবঙ্গের দাদাবাবুদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বঙ্গের মুসলমান জাতীসত্তার উম্মেস ঘটিয়েছিল। তখন এদেশের মানুষকে অনেক প্রতিকুলতার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ দাদা ঠাকুরের নেতৃত্বে এদেশের মুসলামনদের অগ্রযাত্রা রুখে দেওয়ার জন্য পূর্ববাঙ্গলার মুসলিম জাতীসত্তাকে সেদিন রুখে দিতে চেয়েছিল। ঢাকা এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ রধ করে এদেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
মামনুল হক বলেন, ১৯৪৭ এর পরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ৬৬ সালেরর ৬ দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যত্থ্যান ৭০ এর নির্বাচন ও ৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর এদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকে কখনো ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হয়নি। এদেশের মানুষকে কখনো ধর্মনিরপেক্ষ নামক কুফরি মতবাদ শুনানো হয়নি। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিলাভের পর স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগের পিতা শেখ মুজিব পশ্চিম পকিস্থানে বন্দি ছিলেন। স্বাধীনতার পর মুক্তি পেয়ে প্রথমে লন্ডন থেকে তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা না রেখে বাংলার মানুষের কাছে না এসে সর্ব প্রথম তিনি গিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে। তৎকালিন ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধীর সাথেস্বাক্ষাত করলেন। আর সেদিনেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটেছিল। সেদিনেই ইন্দ্রিগান্ধী তাকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিয়েছিলেন, সেই প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের নয়  মাসের মুক্তিযুদ্ধ ২৪ বছরের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই এই সব কিছু ভারতের বুটের তলায় পিষ্ট করা হয়েছিলো। ভারতের প্রধান মন্ত্রী লিখে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে একটি সংবিধান রচনা করার। যেই সংবিধানে ভারতীয় সংবিধানে মুল নীতিগুলো অক্ষরে অক্ষরে অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার জন্য। শেখ মুজিবুর রহমান নয়দিল্লী থেকে বাংলাদেশে এলেন, ৭২ সালে সংবিধান রচিত হলো। আর সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মুসলমানদের ১৯০ বছরের সংগ্রামের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেই সংবিধানে নেছার উদ্দীনের বাঁশের কেল্লার ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছিলো, সেই সংবিধানে ফকির মজনু শাহ, হাজী শরিয়তুল্লাহর শত বছরের সংগ্রামের ইতিহাসকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করা হয়েছিলো, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও পূর্ব বাংলার মুসলমানদের সতন্ত্র জাতীসত্তার ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক লহর প্রস্তাবের ইতিহাসকে অস্বীকার করা হলো, এই সব কিছু করে ভারতের সংবিধানের মূল নীতির ভিত্তিতে কপি পেষ্ট করে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারত মাতার চরণতলে বলিদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২৪ শে জুলাই-আগষ্টের এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজনীতি, আওয়ামীলীগের বিভাজন ও মিথ্যার রাজনীতিতে বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শণ করেছে। আওয়ামীলীগ চেয়েছিল এই দেশকে বিভক্ত করে রাখতে। তাঁদের মুলনীতি ও অর্থনৈতিক পলিসি ছিল, “যারা শেখ হাসিনার গুনগান গাইবে শেক হাসিনার আনুগত্য প্রকাশ করলে, তারা স্বাধীনতার সময় যে পক্ষেই থাকুক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিতি পাবে। আর শেখ হাসিনার বিপক্ষে গেলেই তারা রাজাকার হয়ে যায়। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধ আর রাজাকার দুইটা পক্ষ তৈরী করে শেখ হাসিনা বছরের পর বছর বাংলাদেশে শাসন করে গেছে। এদেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছে। ২০২৪ এর জুলাই আগষ্টে বাংলার ৪ কোটি দামাল ছেলেরা কোঠা সংস্কারের যৌক্তিক দাবী নিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছিল। মেধাবিত্তিক জাতী গঠনের জন্য দাবী জানিয়েছিল সেখানেও শেখ হাসিনা তাদের রাজাকারের বাচ্ছা বলে গালি দিয়েছে।
তিনি বলেন শেখ হাসিনা তার বাবার প্রতিশোধ নিতেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। যারা তার বাবাকে হত্যা করেছিলেন, তাদের হত্যা করার অভিপ্রায় নিয়েই শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা ৫০ বছর রাজনীতি করেছেন শুধুমাত্র তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে। এজন্যই তিনি জানতেন ৫ আগষ্ট বাংলাদেশে কি ঘটতে যাচ্ছে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুগ্ম মহাসচিব যথাক্রমে মাওলানা আতাউল্লা আমিন, শরাফত হুসাইন, মাওলানা শরীফ সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
গন সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মেহেরপুর আনসার ভিডিপি মসজিদের পেশ ইমাম সাব্বির রহমান।

Tanim Cargo
Tanim Cargo