হামিদুজ্জামান জলিল, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সরকারী অনুমোদন ছাড়া যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল (স-মিল)।
নিয়মনীতি থোরাই কেয়ার করে অবৈধ করাত কলে প্রতিদিন সাবাড় হচ্ছে বনজ ও ফলদসহ নানা প্রজাতির গাছ। সেই সাথে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের আদেশ দিলেও শৈলকুপা উপজেলা বন কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ করাতকল মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে তিনি অবৈধ করাত কল চালাতে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলকুপার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় অর্ধশত স-মিল রয়েছে। লাইসেন্স ছাড়াই যুগের পর যুগ এসব স-মিলের মালিকরা ব্যবসা করে আসছে। স-মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম নীতি থাকলেও শৈলকুপা উপজেলা জুড়ে এ চিত্র ভিন্ন। বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে সতর্ক করা হলেও চোখের সামনে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব স-মিল। অধিকাংশ স-মিল সড়কের পাশে হওয়ায় সড়কের ধার জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে শত শত গাছের গুঁড়ি। ফলে লোকজন মূল সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকির অভাবে রাস্তার পাশ, আবাসিক স্থান ও বাণিজ্যিক এলাকায় বসানো হয়েছে স-মিল।
জানা যায়, শৈলকুপা পৌর এলাকার হাবিবপুর, কবিরপুর, সিনেমা হলরোড, ফাজিলপুর, চরআউশিয়া ছাড়াও উপজেলার বারইপাড়া, নাদপাড়া, গাড়াগঞ্জ, বসন্তপুর, সাধুহাটি, বরিয়া, কাতলাগাড়ি খুলুমবাড়ি, তমালতলা, কাচেরকোল, কচুয়া, মদনডাংগা, শেখপাড়া, আলমডাংগা, গাড়াখোলা, চড়ইবিল, ভাটই, লাঙলবাধ, ধাওড়া, রয়েড়া, বকশীপুর, হাটফাজিলপুর ও আবাইপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার সংলগ্ন ও লোকালয়ে এসব অবৈধ সমিল রয়েছে।
এ সব করাতকলের কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই। বেশকিছু করাতকল একেবারেই স্পর্শকাতর জায়গায় অবস্থিত। যদিও স-মিল স্থাপন বিধিতে বলা হয়েছে, সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটার এবং সরকারি বনভূমির সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স-মিল স্থাপন করা যাবে না। এ ছাড়া সকাল ৬টার আগে এবং সন্ধ্যা ৬টার পরে স-মিল চালানো যাবে না। সেইসাথে স-মিল চালানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু শৈলকুপার স-মিল মালিকরা এ সব আইন কানুন মানেন না।
রয়েড়া বাজারে অবস্থিত লাইসেন্সবিহীন মায়ের দোয়া স-মিলের মালিক মোঃ রুবেল বলেন, আমরা এখনো লাইসেন্স পাইনি। তবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি।
লাইসেন্স না থাকার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স-মিল মালিক জানান, তারা লাইসেন্স ছাড়াই চলতে পারছেন। তাই লাইসেন্স করার দরকার পড়ে না। প্রতি মাসে তারা ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে বছরের পর বছর করাত কল চালিয়ে যাচ্ছেন। শৈলকুপা উপজেলা স-মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইরাদ আলী বলেন, উপজেলাতে অর্ধশত স-মিল রয়েছে। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া কোন স-মিলের লাইসেন্স নেই।
মিল সমিতির সাধারণ সম্পাদক এলিট খন্দকার জানান, সমিতিভুক্ত সদস্যদের অনেকবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করতে বলা হলেও উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তার সাথে বিশেষ যোগাযোগ করে তারা মিল চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা মখলেসুর রহমান বলেন, শৈলকুপাতে কিছু কিছু স-মিলের লাইসেন্স থাকলেও বেশীরভাগ স-মিলের লাইসেন্স নেই। কিছুদিন আগেও আমরা অবৈধ কয়েকটি সমিলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে উঠছি না।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে নোটিশ করা হয়েছে এবং আরো নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশের মেয়াদ পার হলেই অবৈধ স-মিলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।