ঢাকাশুক্রবার , ৮ নভেম্বর ২০২৪

জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল

আজকের বিনোদন
নভেম্বর ৮, ২০২৪ ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ । ৪৮ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ধর্ম ডেস্ক: জুমার দিন মুসলমানের জন্য এক কল্যাণকর এবং নেয়ামতের দিন। আমলের দিক থেকে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন এর অন্যতম হলো জুমার দিন। এই দিনটিকে সাইয়িদুল আইয়াম বা সমস্ত দিনের সরদার বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এই দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায়, মুসলমানরা আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদাত করার মাধমে দিনটিকে অর্থবহ করে তুলতে পারেন।

>> জুমার দিনের ফজিলত

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলার বলেনঃ জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের প্রতি ধাবিত হও এবং বন্ধ করে দাও বেচা- কেনা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে (সূরাহ্ আল-জুমু‘আহ ৬২/৯)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত হাদিসে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ায় আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার পূর্বে। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহূদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। (বুখারিঃ ২৩৮, ৮৯৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫২)।

নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিমঃ ৮৫৪)। অন্য একটি হাদিসে (আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারিঃ ৯৩৫, ৫২৯৪, ৬৪০০; মুসলিম ৭/৪, হাঃ ৮৫২, আহমাদ ১০৩০৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮২; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৮)

জুমার দিনের আমলসমূহঃ

১। মিসওয়াক করা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম (বুখারিঃ ৮৮৭, ৭২৪০; মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫২, আহমাদ ৭৪১৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৩) ।

২। জুমার দিন ফজরের সালাতের সুরা : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ এবং وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنْ الدَّهْرِ দু’টি সূরাহ্ তিলাওয়াত করতেন। (বুখারিঃ ৮৯১, ১০৬৮; মুসলিম ৭/৬৪, হাঃ ৮৮০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৭)

৩। সুরা কাহাফ পড়া : হজরত আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)

৪। দরুদ শরিফ পড়া : হজরত আউস বিন আবি আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ ১০৪৭)

৫। মসজিদে সবার আগে যাওয়া : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকাহ যিকর শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (বুখারিঃ ৮৮১; মুসলিম ৭/২, হাঃ ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)

facebook sharing buttontwitter sharing buttonlinkedin sharing buttonpinterest sharing buttonsharethis sharing button
জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল
মো. মাসুদ চৌধুরী:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪, ১:৩৮ পিএম
জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল
জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল
জুমার দিন মুসলমানের জন্য এক কল্যাণকর এবং নেয়ামতের দিন। আমলের দিক থেকে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন এর অন্যতম হলো জুমার দিন। এই দিনটিকে সাইয়িদুল আইয়াম বা সমস্ত দিনের সরদার বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এই দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায়, মুসলমানরা আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদাত করার মাধমে দিনটিকে অর্থবহ করে তুলতে পারেন।

>> জুমার দিনের ফজিলত

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলার বলেনঃ জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের প্রতি ধাবিত হও এবং বন্ধ করে দাও বেচা- কেনা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে (সূরাহ্ আল-জুমু‘আহ ৬২/৯)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত হাদিসে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ায় আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার পূর্বে। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহূদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। (বুখারিঃ ২৩৮, ৮৯৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫২)।

নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিমঃ ৮৫৪)। অন্য একটি হাদিসে (আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারিঃ ৯৩৫, ৫২৯৪, ৬৪০০; মুসলিম ৭/৪, হাঃ ৮৫২, আহমাদ ১০৩০৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮২; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৮)

জুমার দিনের আমলসমূহঃ

১। মিসওয়াক করা
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম (বুখারিঃ ৮৮৭, ৭২৪০; মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫২, আহমাদ ৭৪১৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৩) ।

২। জুমার দিন ফজরের সালাতের সুরা : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ এবং وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنْ الدَّهْرِ দু’টি সূরাহ্ তিলাওয়াত করতেন। (বুখারিঃ ৮৯১, ১০৬৮; মুসলিম ৭/৬৪, হাঃ ৮৮০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৭)

৩। সুরা কাহাফ পড়া : হজরত আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)

৪। দরুদ শরিফ পড়া : হজরত আউস বিন আবি আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ ১০৪৭)

৫। মসজিদে সবার আগে যাওয়া : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকাহ যিকর শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (বুখারিঃ ৮৮১; মুসলিম ৭/২, হাঃ ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)

৬। জুমার জন্য গোসল ও সুগন্ধি /তৈল ব্যবহার : সালমান ফারিসী (রাযি.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারিঃ ৮৮৩, ৯১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯) । অন্য একটি হাদিস আমর ইবনু সুলাইম আনসারী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে (বুখারিঃ ৮৮০)।

৭। জুমার দিনের জামাকাপড় : আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোষাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমু‘আহর দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোষাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমার (রাযি.)-কে প্রদান করেন। ‘উমার (রাযি.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোষাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) তখন এটি মক্কা্য় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল। (বুখারিঃ ৮৮৬, ৯৪৮, ২১০৪, ২৬১২, ২৬১৯, ৩০৫৪, ৫৮৪১, ৫৯৮১, ৬০৮১; মুসলিম ৩৭/ আওয়ালুল কিতাব, হাঃ ২০৬৮, আহমাদ ৫৮০১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪২)

৮। মসজিদে পায়ে হেঁটে চলা : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। (বুখারিঃ ৯০৮; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬২)

৯। মসজিদে বসার পূর্বে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় : জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দু’ রাক‘আত সালাত আদায় কর। (বুখারিঃ৯৩০, ৯৩১; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৪)

১০। মসজিদে কোন ব্যক্তি তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় না বসা : ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহ.) বলেন, আমি নাফি‘ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আহর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু‘আহ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও। (বুখারিঃ ৯১১, ৬২৬৯, ৬২৭০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৫)

১১। খুতবাহর সময় ইমামের দিকে মুখ করা বসা এবং মনোযোগের সাথে শোনা : আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.)বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বারের উপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারদিকে (মুখ করে) বসলাম। (বুখারিঃ ৯২১, ১৪৬৫, ২৮৪২, ৬৪২৭; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৬৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭৫)। অন্য একটি হাদিস আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমু‘আহর দিন মসজিদের দরজায় মালাইকাহ অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমণকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে সে আসে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে, অতঃপর মেষ কুরবানী করার ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকাহ তাঁদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শ্রবণ করতে থাকে। (বুখারিঃ ৯২১, ৯২৯, ৩২১১; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮২)

১২। জুমার (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা : আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাযি.) হতে হাদিসটি বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’ রাক‘আত ও পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক‘আত এবং ‘ইশার পর দু‘ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু‘আহর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। (বুখারিঃ ৯৩৭, ১১৬৫, ১১৭২, ১১৮০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮৪; ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৯০)

১৩। দুপুরের আহার্য : সাহল (রাযি.) বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুমু‘আহর দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মূলই এর গোশ্ত (মাংসের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমু‘আহর সালাত হতে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে রাখতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুমু‘আর দিন উদগ্রীব থাকতাম। (বুখারি ৯৩৮, ৯৩৯, ৯৪১, ২৩৪৯, ৫৪০৩, ৬২৪৮, ৬২৭৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৯১)।

১৪। কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হাল্কা নিদ্রা) : সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত হাদিসে, তিনি বলেছেন, জুমু‘আহ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হাল্কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম। (বুখারিঃ ৯৩৯, ৯৩৮; মুসলিম ৭/৯; হাঃ ৮৫৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৯২)

১৫। অনুগ্রহ তালাশ : মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করবে।’’ (সূরাহ্ জুমু‘আহ ৬২/১০)

১৬। দোয়া করা : জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

জুমু‘আহর দিন মুসলমানের জন্য এক কল্যাণকর এবং নেয়ামতের দিন। এর ফজিলত লিখে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ্ তাহলা আমাদের জুমু‘আহর দিনে ইবাদাত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ্ আমাদের সকলের প্রতি সহায় হন।

Tanim Cargo