আশিকুর রহমান :-
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কর্তন, গ্রামীন সড়ক পাকা করে দেওয়ার নামে এলাকা থেকে টাকা উত্তোলন, এলজিএসপি ও কাবিটার টাকা আত্মসাত, বালু বিক্রির টাকা আত্মসাত, দুস্থদের ভিজিডির চাল আত্মসাত, টিসিবির পণ্য আত্মসাত, ভিজিএফ কার্ড বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতা, নানান অনিয়ম সহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আতাউর অল-টাইম নামক একটি ফুড প্রোডাক্ট এর এরিয়া ডিলারশীপের সত্ত্বাধিকারী ছিলেন। পরে স্থানীয় এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে বগলে এনে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন তিনি। চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটিও বাগিয়ে নেন তিনি। পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপ-ব্যবহার শুরু করেন তিনি। দূর্নীতি ও স্বজন প্রীতি সহ সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট, মনগড়া ভাবে সরকারি গাছ কর্তন করে অন্যত্রে বিক্রয়, পরিষদের বরাদ্দকৃত ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প, এলজিএসপি, কাবিটা প্রকল্প গুলো সরকারী বিধি উপেক্ষা করেন তিনি। এছাড়াও ইউপি মেম্বারদেরকে প্রকল্পের সভাপতি না করে বরং পরিষদের বাহিরের মানুষ দিয়ে প্রকল্প উত্তোলন করেন এ চেয়ারম্যান। এছাড়াও ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে পকেট কমিটির সদস্যদের দিয়ে গ্রামীন সড়ক পাকা (পিচঢালাই) করে দিবে বলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা উত্তোলন, পুল ও কালভার্ট করে দিবে বলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন, হোল্ডিং ট্যক্সের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি, জন্মনিবর্ধন, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী, মাতৃকালিনসহ সকল বিষয় থেকে ৩ বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। ধুকুন্দি চরে পার্শ্ববর্তী আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে ২০১৯-২০ সালে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হয়। পরে ওই বালু এলাকার স্থানীয় কৃষকদের জমিতে রাখা হয়। এমতাবস্তায় ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে, সেই বালুতে তার নজর পরে তার। প্রায় ২০ কানি জমির উপর রাখা কয়েক লাখ ফুট বালু সে ও তার সহযোগী সারোয়ার হোসেন শাহিনের যোগসাজশে ২০২৩-২৪ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন। পরে স্থানীয় জমির মালিক সাঈদ মিয়া, হারিছুল হক, সাইফুল ইসলামসহ আরও অন্যান্য কৃষকের পক্ষে শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন। তবে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের চেয়ারম্যান এবং এমপি রাজুর ঘনিষ্ঠ ভাজন হওয়ায় তার কুকীর্তি ভয়ে এতদিন কেও মুখ খুলেনি। এত অনিয়ম ও দূর্নীতি থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এবিষয়ে জানতে আতাউর রহমানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ও হত্যার দায়ে গত ৪ অক্টোবর রাতে নিজ বাসা থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হোন বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনেরা।