আশিকুর রহমান :-
নরসিংদী জেলার সর্বত্রে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসা শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জনজীবন। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। টানা একসপ্তাহ ধরে নরসিংদীতে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে শিশুসহ বয়স্ক রোগীর সংখ্যা।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে নরসিংদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। দিনের অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সূর্য উত্তাপ ছড়াতে না পারায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা।
এমন অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় রাস্তাঘাট, হাটবাজার, রেলস্টেশন বাস টার্মিনালে লোকসমাগম নেই বললেই চলে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীরা আসলেও কাজকর্মে চলছে স্থবিরতা। অপরদিকে জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষরা ঘর থেকে বের হলেও কাজ না পেয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, জেলে ও কৃষিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘনকুয়াশার কারণে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না। পাশাপাশি কৃষকরা তাদের জমি চাষাবাদ ব্যাহত রেখেছেন। এতে করে স্থানীয় বাজার গুলোতে মাছ ও সবজির সংকট দেখা দিয়েছে।
নরসিংদী বড় বাজারের দিনমজুর শহীদ মিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, তীব্র ঠান্ডায় কাজে যেতে পারছি না। অভাবের সংসারে কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেও কাজ নেই। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছি বিপাকে। কাজ না থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি।
শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় এক রিকশা চালকের সাথে। তিনি বলেন, একসপ্তাহ ধরে রোদ ওঠে না। ঠান্ডা বাতাসের কারণে রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হলে রাস্তায় যাত্রী নেই। অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েকদিন ধরে রোজগার অর্ধেক নেমে গেছে। যা রোজগার করি রিকশা জমা দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি।
শহরের পার্শ্বে মেঘনা নদীর জেলে ইব্রাহীম বলেন, ঘনকুশায়া ও ঠান্ডা বাতাস। এ অবস্থায় নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরা অসম্ভব। তাই কয়েকদিন ধরে জাল নিয়ে নদীতে যাওয়া হচ্ছে না। কৃষক জহির মিয়া বলেন, এ শীতে ঘরে টিকে থাকা অসম্ভব। খোলা মাঠে গিয়ে চাষবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কামলা না থাকায় জমিতে চাষবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। শীত ও কুয়াশা যদি কমে, তাহলে আবার চাষাবাদ শুরু করবো।
নরসিংদী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে নরসিংদীর তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ রকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা কম।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীই শিশু ও বয়স্ক। আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এ সময় চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা লাগানো একেবারেই যাবে না। এদিকে শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রেখেছেন জেলা প্রশাসক। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে ছিন্নমূল ও পথ শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।